NATIONAL GARMENT WORKERS FEDERATION (NGWF)

গণহত্যার বিচার, খুনিদের শাস্তি, নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনঃর্বাসনের দাবী

জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন-এর নিহত ৮ সদস্য সহ ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থানে নিহত ১১ গার্মেন্টস শ্রমিক এবং ৮ শতাধিক গণহত্যার বিচার, খুনিদের শাস্তি, নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনঃর্বাসন চাই
—জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন (NGWF)

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন-এর নিহত ৮ সদস্য সহ ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থানে নিহত ১১ গার্মেন্টস শ্রমিক এবং ৮ শতাধিক গণহত্যার বিচার, খুনিদের শাস্তি, নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনঃর্বাসন দাবী জানিয়েছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন (NGWF)। গত ১৫ সেপ্টেম্বর, রবিবার, সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবী জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশনের নিহত ৮ গার্মেন্টস কর্মীর পরিবার বর্গ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বেশ কিছু আহত শ্রমিকেরাও তাদের সাথে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ্য করা হয় জুলাই-২০২৪ এ স্বৈরাচারী সরকারের নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় প্রায় ৮০০ জনকে। এই গণহত্যায় নিহত হয় শতাধিক শ্রমিক। এদের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিক ১১ জন, আর এই ১১ জনের মধ্যে আমাদের ফেডারেশন (জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন)-এর‘ই ৮ জন।
এই আন্দোলন এবং পরিবর্তনে যে ৮ শতাধিতক মানুষ জীবন দিয়েছেন, তাদের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিক সহ শ্রমিকের সংখ্যা ২ শতাধিক। তাই আমরা এটাকে শুধুমাত্র ছাত্র গণঅভ্যুত্থান না বলে “ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থান” হিসাবে উল্লেখ্য করতে চাই।
সংবাদ সম্মেলন থেকে উল্লেখ্য করা হয় গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী শাসন আমলে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১৫ লক্ষ কোটি টাকা। আর এই ১৫ বছরে দেশবাসীর গাঁড়ে চেপেছে ১৮ লক্ষ কোটি টাকার বিদেশী ঋণের বোঝা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বিদেশে পাচারকৃত ১৫ লক্ষ কোটি টাকা অবিলম্বে দেশে ফেরৎ আনার দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে ১৮ লক্ষ কোটি টাকার বিদেশী ঋণের বোঝা থেকে দেশ এবং দেশবাসীকে মুক্ত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে এখনই আলাপ-আলোচনা শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নিহত ৮ শ্রমিক পরিবার ও গার্মেন্টস শ্রমিকদের নি¤œ লিখিত দাবী সমূহ তুলে ধরা হয় ঃ
১. অবিলম্বে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের ৮ সদস্য সহ ১১ জন গার্মেন্টস শ্রমিক ও সকল শ্রমিক হত্যার বিচার, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. নিহত ফেডারেশনের ৮ সদস্যের পরিবার ও সকল শ্রমিক পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পুনঃবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ফেডারেশনের আহত ৫০ সদস্যসহ সকল আহত শ্রমিকের প্রয়োজনীয় এবং উচ্চতর চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গত মজুরী আন্দোলনে ২০ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকের নামে দায়েরকৃত ৪৩ টি সহ শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. প্রত্যেক কারখানায় ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।
৬. যে সকল কারখানার শ্রমিকেরা ইতিমধ্যে মিডলেভেল ম্যানেজমেন্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তদন্ত
৭. সাপেক্ষ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৮. বে-আইনীভাবে শ্রমিকদের বøাক লিষ্ট (কালো তালিকা) করা বন্ধ করতে হবে। ইতিপূর্বে বøাক লিষ্টকৃত তালিকা বাতিল করতে হবে।
৯. গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী বহিরাগতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
১০. শ্রমিক সংগঠনগুলোকে স্বাধীন ভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সকল বাধা দূর করতে হবে।
১১. কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে।
১২. ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং পরিচালনায় সকল বাধা দূর করতে হবে।
১৩. ৪২ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নি¤œ আয়ের শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
১৪. কোন কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিলে শ্রমিক প্রতিনিধিদেরসহ দ্রæত সামাধান করতে হবে।
১৫. দ্রæত সময়ের মধ্যে শ্রম আদালতের মামলা নিষ্পিত্তি করতে হবে।
১৬. আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর আলোকে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা‘কে সংস্কার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ঃ
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জনাব আমিরুল হক্ আমিন।

অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঃ

  • জনাব এ্যাডভোকেট এ. কে. এম. নাসিম – কান্ট্রি ডিরেক্টর, সলিডারিটি সেন্টার, বাংলাদেশ
  • জনাব শহিদুল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক, আইবিসি (ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল)
  • জনাব আবুল হোসাইন, সভাপতি, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন

এ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঃ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মিসেস আলেয়া বেগম, সহ-সভাপতি মিসেস জেসমিন আক্তার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কবির হোসেন, নারী বিষয়ক সম্পাদক মিসেস সুইটি সুলতানা, দপ্তর সম্পাদক মোঃ রিয়াদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেত্রী মিস ক্যামেলিয়া হাসান, সুরাইয়া জেসমিন রুমা, মিসেস মনিরা মুন্নি প্রমূখ।

পোস্ট সম্পাদন : রিয়দ হোসেন, ঢাকা, বাংলাদেশ।