NATIONAL GARMENT WORKERS FEDERATION (NGWF)

গার্মেন্টস শ্রমিক সংবাদ সম্মেলন

  • গার্মেন্টস শ্রমিক মজুরী আন্দোলনে ৪ শ্রমিক হত্যার বিচার, নিহত শ্রমিক পরিবারকে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসারে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ২০ হাজার শ্রমিকের নামে দায়েরকৃত ৪৩ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে আজ ০৪ জুলাই, ২০২৪, বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩ টায়, জহুর হোসেন চৌধুরী হল (২য় তলা), জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ঃ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জনাব আমিরুল হক্ আমিন।
উপস্থিত ছিলেন ঃ ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক এইচ রবিউল চৌধুরী, মিসেস জেসমিন আক্তার সভাপতি, ক্যামেলিয়া হাসান সাধারণ সম্পাদক নারী কমিটি প্রমূখ।
সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন ঃ শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইনন ও শেহলী আফরোজ লাভলী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরার আগে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরী আন্দোলনে গ্রেফতার ৭ জন নেতাকর্মীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
জনাব আমিরুল হক্ আমিন লিখিত বক্তবে বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরী প্রতি ৫ বছর পর পর মজুরী গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি/পুনঃনির্ধারিত হবে। শ্রম আইনে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ বছর পার হওয়ার পরই সরকার মজুরী পুনঃনির্ধারণ এর ব্যবস্থা করতে পারবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, মজুরী নির্ধারিত হয় – ৫ বছর পর পর। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরী বোর্ড গঠনের সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও সরকার মজুরী বোর্ড গঠন না করায় জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এর উদ্যোগে প্রচার-প্রচারণা, সভা সমাবেশ, মানববন্ধন, শ্রম মন্ত্রনালয়, মজুরী বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট মহলে স্বারকলিপি, মজুরী বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধির নাম প্রস্তাবসহ বিভিন্ন ভাবে চাপের মুখে গত ১০.০৪.২০২৩ তারিখে আইএলও কনভেনশন লঙ্ঘন করে সরকার গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য মজুরী বোর্ড গঠন করে। যা সারাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষুব্ধ করে।

জনাব আমিন গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরী নিয়ে বিক্ষুদ্ধতার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন ক. আইএলও কনভেনশন এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন অমান্য করে মালিকদের পছন্দ মতো শ্রমিক নেতাকে মজুরী বোর্ডে প্রতিনিধি হিসাবে যুক্ত করেন। খ. মজুরী বোর্ড গঠন হয় ১০.০৪.২০২৪ তারিখে। কিন্তু গার্মেন্টস মালিক পক্ষের প্রতিনিধির কারণে মজুরী বোর্ডের কার্যক্রম যথাযথভাবে অগ্রসর না হওয়া। গ. মজুরী বোর্ডে সেক্টরের প্রতিনিধি মজুরী প্রস্তাব করেন ২২.১০.২০২৩ ইং তারিখ। কিন্তু মালিক প্রতিনিধি প্রস্তাব পেশ করেন ৪র্থ সভায় । ঘ. মালিক পক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে শ্রমিকদের প্রত্যাশিত এবং শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধির দাখিলকৃত মজুরীর চেয়ে অনেক কম মজুরী নির্ধারণের যুক্তি হাজির করেন। ঙ. মজুরী র্বোডের ৪র্থ সভায় মালিক প্রতিনিধি নি¤œতম মজুরীর প্রস্তাব করেন মাত্র ১০৪০০/- টাকা যা ৮৯ ডলারের সমান। ২০১৮ সালে সর্বনি¤œ মজুরী ছিল ৮,০০০/- টাকা যা তখনকার বিনিময় হারে ১০০ ডলারের সমান। ২০২৩ সালের ৪র্থ সভা অর্থাৎ ২২.১০.২০২৩ তারিখে বিনিময় হার অনুসারে ১০০ ডলারের মূল্যমান দাঁড়ায় ১১,৩৪৯ টাকা।
একদিকে ২০১৮ থেকে ২০২৩ গত ৫ বছরে দ্রব্যমূল্য কোন কোন ক্ষেত্রে বেড়ে ২ গুন, কোন কোন ক্ষেত্রে ৩ গুন হয়েছে। আর অন্যদিকে গার্মেন্টস শ্রমিকেরা মালিকদের প্রস্তাবে দেখতে পায় যে, তাদের মজুরী ২০১৮ সালের চাইতে ২০২৩ সালে ৯৪৯ টাকা কম প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি শ্রমিকদের চরম ভাবে বিক্ষুব্ধ করে, গার্মেন্টস শ্রমিকেরা মালিকদের এই প্রস্তাবকে শ্রমিকদেরকে অপমান করার সামিল বলে গণ্য করে। উল্লেখিত ৫ টি কারণে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলশ্রæতিতে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকেরা “ ধীরে চলো ” নীতি, ঘরোয়া আলোচনা, কোন কোন কারখানায় কর্তৃপক্ষ বরাবর মজুরী বৃদ্ধির দাবীনামা উত্থাপন এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে “ কাজ বন্ধ ” করে।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের এই “ ধীরে চলো ”, “ কাজ বন্ধ ” এই বিষয়গুলোকে অধিকাংশ গার্মেন্টস মালিক দমন পীড়ন, মাস্তান দ্বারা শ্রমিকদের গণপিটুনি, শ্রমিকদের বাসায় বাসায় হুমকি, শ্রমিকদের চাকুরীচ্যূতি ইত্যাদির আশ্রয় নেন। অন্যদিকে প্রশাসনের বিশেষতঃ শিল্প পুলিশ, বিভিন্ন সংস্থা এরাও একই ধরণের প্রদ্বতি গ্রহণ করে। ফলে শ্রমিকেরা আরো বিক্ষুদ্ধ এবং অসহিষনু হয়ে পড়ে।
বিক্ষুদ্ধ এবং অসহিষনু গার্মেন্টস শ্রমিকেরা যখন কারখানা থেকে বের হয়ে রাস্তায় মিটিং মিছিল এবং বিক্ষোভ শুরু করে, তখনও মালিকেরা এবং সরকার এটাকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ না নিয়ে হি¯্রতার আশ্রয় নেয়।
পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় মিছিলে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকদের উপর, এমনকি কারখানার গেটে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকদের লক্ষ্য করে। মালিকদের ভাড়াটে বাহিনী কোন কোন ক্ষেত্রে গুলি, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে লাঠি পেটা শুরু করে।
পুলিশ এবং মালিকদের ভাড়াটে বাহিনীর গুলি, হামলা এবং তান্ডবে ৪ জন শ্রমিক নিহত হয়। পুলিশ ৮ জন শ্রমিক নেতা সহ ১২১ জন নেতা কর্মী এবং শ্রমিককে গ্রেফতার করে।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের নি¤œতম মজুরী নির্ধারণে দাবী এবং আন্দোলন অন্যান্ত যুক্তি সংগত এবং ন্যায় সংগত। শ্রমিকদের ন্যায় সংগত দাবী এবং আন্দোলনকে দমন করার জন্য গার্মেন্টস মালিকদের এবং সরকারের নেয়া সকল পদক্ষেপ অন্যায়, অযুক্তিক এবং অগ্রহণ যোগ্য। বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের দমনের নামে গুলি চালানো অত্যান্ত নির্মম। অমরা পুলিশের গুলিতে নিহত ৪ শ্রমিকের মৃতুকে শ্রমিক হত্যার সামিল বলে মনে করি।
তিনি আরো বলেন যে, ইতিমধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরী নির্ধারণ হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের শুরু করা মজুরী আন্দোলনেরও সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু ২০ হাজার শ্রমিকের নামে দায়েরকৃত ৪৩ টি মামলার ১ টিও প্রত্যাহার করা হয় নাই — যেটা উদ্যেশ্যে প্রণোদিত। এই হীন উদ্দেশ্য হলো ঃ ১. শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে না দেয়া ২. শ্রমিকের সংগঠিত হতে না দেয়া ৩. শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার হরণ করা ৪. শ্রমিকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার পথ রুদ্ধ করা ৫. নারী শ্রমিকদের মের্টানিটি ছুটি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ৬. যৌন হয়রানীর প্রতিবাদের রাস্তা বন্ধ করা।
প্রতিবাদী শ্রমিকদের অজ্ঞাত আসামীর জায়গায় নাম বসিয়ে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে উল্লেখিত অধিকার হরণ করা হচ্ছে। গার্মেন্টস মালিকেরা এই মিথ্যা মামলাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে নি¤েœউল্লেখিত ৬ টি দাবী তুলে ধরা হয় ঃ
১। ৪ জন গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং বিচার করতে হবে।
২। নিহত ৪ জন শ্রমিকের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আই.এল.ও কনভেনশন ১২১ অনুসারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৩। গ্রেফতারকৃত শ্রমিক নেতাসহ ১২১ জনকে হয়রানী, নির্যাতন, কাজে অউপস্থিত এর বিপরীতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৪। গনহারে শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের গ্রেফতার ও হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
৫। ২০ হাজার শ্রমিকের নামে দায়েরকৃত ৪৩ মিথ্যা মামলা প্রত্যহার করতে হবে।
৬। কোন শ্রমিককে বøাক লিষ্ট-কালো তালিকাভুক্ত করা যাবে না।

পোস্ট সম্পাদন : রিয়াদ হোসেন, ঢাকা, বাংলাদেশ.