গার্মেন্টস শ্রমিক কেন্দ্রীয় পতাকা বন্ধন অনুষ্ঠিত

গার্মেন্টস শ্রমিক পতাকা মিছিল, ছবি: রিয়াদ হোসেন

প্রফেসর ড. ইউনূস-এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন, নিহত গার্মেন্টস শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ – হত্যাকান্ডের বিচার এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৪২ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকদের আশু দাবী সমূহ তুলে ধরার লক্ষ্যে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে গত ১১ আগষ্ট ২০২৪, বিকাল ৪ টায়, আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সামনে গার্মেন্টস শ্রমিক কেন্দ্রীয় পতাকা বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচীতে শতাধিত গার্মেন্টস শ্রমিক লাল-সবুজের পতাকা সহ অংশ নেয়, যাদের অধিকাংশই নারী শ্রমিক।

কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন ঃ ফেডারেশনের সভাপতি জনাব আমিরুল হক্ আমিন, সঞ্চালনা করেন ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম।

        বক্তব্য রাখেন ঃ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, সহ-সভাপতি মিসেস জেসমিন আক্তার, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ কবির হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মোঃ রিয়াদ হোসেন, নারী নেত্রী মিসেস সুইটি সুলতানা, সুরাইয়া জেসমিন রুমা ও কোটা/ছাত্র আন্দোলনে নিহত গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবার প্রমুখ।

সংহতি বক্তব্য রাখেন ঃ জনাব কামরুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক, একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।

বক্তারা বলেন, কোটা প্রথার সংস্কারের দাবীতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এবং এ আন্দোলনের সাথে শ্রমিক, কৃষক, যুবক এবং সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। পরবর্তীতে এ আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। ফলে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। মন্ত্রী পরিষদ, জাতীয় সংসদ এবং গত সরকারের নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যাক্তিরাও পদত্যাগে বাধ্য হন।

পরবর্তীতে ছাত্র জনতার মতামতের ভিত্তিতে প্রফেসর ড. ইউনূস‘কে প্রধান করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয় — যে সরকারের তত্ত¡াবধানে বর্তমানে দেশ চলছে।

পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী সরকারের নির্দেশে পরিচালিত নারকীয় হামলায় দেশের ৮৪% বৈদেশীক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প গার্মেন্টর এর ১১ জন শ্রমিক নিহত হয়। যাদের মধ্যে আমাদের ফেডারেশন এর সদস্য ৫ জন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ আহত হয়েছে ৫০ জনের অধিক, গ্রেফতার করা হয়েছে ফেডারেশনের প্রায় ১০০ জন সদস্যকে। কর্মসূচী থেকে এই সমস্ত কর্মকান্ডের তিব্র নিন্দা জানানো হয়।

গার্মেন্টস শ্রমিক পতাকা মিছিল, ছবি: রিয়াদ হোসেন

কর্মসূচী থেকে ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক্ আমিন প্রফেসর ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৪২ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবী সমূহ ঃ
১. অবিলম্বে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের ৫ সদস্য সহ ১১ গার্মেন্টস শ্রমিক, দোকান এবং রিটেইল শ্রমিক সহ সকল শ্রমিক ও গণ হত্যার বিচার, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. ফেডারেশনের আহত ৫০ জন সদস্যসহ সকল আহত গার্মেন্টস শ্রমিকের প্রয়োজনীয় এবং উচ্চতর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ফেডারেশনের শতাধিক সহ গ্রেফতারকৃত সকল গার্মেন্টস শ্রমিককে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
৪. নিহত-আহত গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য নির্ধারীত মজুরী অবিলম্বে বৃদ্ধি করতে হবে এবং নি¤œতম মজুরীর টার্ম পরিবর্তন করে “লিভিং ওয়েজ” অথবা “শোভন মজুরী‘কে” আইনগত ভিত্তি দিতে হবে।
৬. অবিলম্বে সারাদেশ এবং সকল সেক্টরের জন্য প্রযোজ্য এবং গ্রহণ যোগ্য জাতীয় নি¤œতম মজুরী ঘোষণা করতে হবে।
৭. ৪২ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৮. ইপিজেড-এ প্রচলিত আলাদা আইন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মূল সংবিধান পরিপন্থি, যা আইএলও কনভেনশন ৭৮ ও ৯৮ এরও পরিপন্থি। তাই অবিলম্বে ইপিজেড এর জন্য প্রচলিত আলাদা আইন অবিলম্বে বাতিল করে দেশে প্রচলিত শ্রম আইনের আওতায় ইপিজেড কে আনতে হবে — যেখানে শ্রমিকেরা মত প্রকাশ, সংগঠন করা এবং দরকষাকষি করার অধিকার পাবে।
৯. আইএলও কনভেনশন ৮৮ ও ৯৮ এর আলোকে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা‘কে সংক্রার করতে হবে।
১০. বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় সকল ধরনের আইনী, গার্মেন্টস মেনেজম্যান্টসহ সকল সামাজিক বাধা বিপত্তি দূর করতে হবে।
১১. নারী শ্রমিকদের সম-অধিকার, সম-মজুরী, পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে সম-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

পোস্ট সম্পাদন: রিয়াদ হোসেন, ঢাকা, বাংলাদেশ।